রবিবার, ১১ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ভোর ৫:২২

মুরাদনগরে শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৪৫টি বিদ্যালয় থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ

35Shares

বেলাল উদ্দিন আহাম্মদ, মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ কুমিল্লার মুরাদনগরে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৪৫টি বিদ্যালয় থেকে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত এক সপ্তাহে উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হায়াতুন্নবী অফিস কক্ষ সংস্কারের কথা বলে তার অধীনে থাকা ২টি ক্লাস্টারের ৪৫টি বিদ্যালয় থেকে ৫’শ টাকা করে চাঁদা নিয়েছেন। আর সেই চাঁদা সংগ্রহ করে দিয়েছে মুরাদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাকির হোসেন মীর।
জানা যায়, উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে ২০৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সেখান থেকে ৪টি ইউনিয়নের দুইটি ক্লাস্টারে ৪৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বে আছেন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হায়াতুন্নবী। গত এক সপ্তাহ আগে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হায়াতুন্নবী মুরাদনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পাজিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জাকির হোসেন মীর কে অফিস কক্ষ সংস্কারের বিষয়টি জানান। পরে শিক্ষক জাকির হোসেনের পরামর্শে সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হায়াতুন্নবীর অধীনে থাকা ২টি ক্লাস্টারের ৪৫ টি বিদ্যালয় থেকে ৫’শ টাকা করে মোট ২২ হাজার ৫’শ টাকা চাঁদা সংগ্রহ করা হয়।
পাজিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অভিযুক্ত মোহাম্মদ জাকির হোসেন মীর কে মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
সোনাকান্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ৫’শ টাকা করে দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আগের স্যারেরাও অফিসের রুম সংস্কারের কথা বলে টাকা নিয়েছে এটা ভাই নতুন কিছু না। ঐদিনও হায়াতুন্নবী স্যার আমাদেরকে ডেকে উনার অফিস রুমটা দেখিয়ে বলল রুমটার অনেক দিক দিয়ে ফেটে গেছে কি করা যায়। তখন স্যারের মন রাখতে গিয়ে আমরা নিজেদের পকেট থেকে সবাই ৫’শ টাকা করে দিয়েছি।
ভাংগানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন আহম্মদ বলেন, আমরা আমাদের ব্যক্তিগত পকেট থেকে টাকাটা দিয়েছি বিদ্যালয়ের কোন ফান্ড থেকে না। আর এই টাকা আমাদের কাছ থেকে নিয়েছেন জাকির হোসেন মীর ও লুৎফুর রহমান।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, সহকারী শিক্ষা অফিসার কে শিক্ষকরা তাদের নিজ পকেট থেকে টাকা দেয়া এবং জাকির হোসেন টাকা সংগ্রহ করে দেয়ার মূল কারণ হচ্ছে? বিদ্যালয় ফাঁকি দেয়া! টাকা দেয়ার ফলে শিক্ষা কর্মকর্তার সহযোগিতায় শিক্ষকরা বিভিন্ন অজুহাতে বিদ্যালয় ফাঁকি দিতে পারবে।
চুলুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: কামরুল ইসলাম (সাহিন) বলেন, রুম সংস্কারের জন্য স্যার টাকা নিয়েছে এটা সত্য। বিষয়টি সাংবাদিকরা জেনে যাওয়ায় স্যার সবাইকে ফোন দিয়ে বলছে যার যার টাকা ফেরত দিয়ে দিবে।
শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মুরাদনগর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হায়াতুন্নবী বলেন, শিক্ষকদের কাছে আমার কোন ডিমান্ড ছিল না। তারা গত বছরও অফিসের একটি রুম সংস্কার করে দিয়েছে। এইবার টিচাররা বলছে স্যার আপনাদের একটা রুম আমরা সংস্কার করে দেব। ওই হিসাবে টিচাররা করছে। আর রুম সংস্কারের কাজও আমি করিনি। সেটা টিচাররাই দপ্তরিদের মাধ্যমে করেছে।
এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি দেখেছি রুমের কিছু একটা কাজ করছে তারা। আমি ভেবেছি হয়তো হায়াতুন্নবী সাহেব তার নিজের টাকা দিয়েই কাজ করছে। শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। আর উনি টাকা চাইতে পারেন না, উনি কোনভাবেই টাকা কালেকশন করতে পারেন না। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে অবশ্যই অভিযুক্তর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুমিল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার পাল বলেন, টাকা দেয়া এবং নেয়া দুইটাই তো অপরাধ। এখানে শিক্ষকরা হয়তো টাকা দিয়েছে সুবিধা নেয়ার জন্য। আর কর্মকর্তা টাকা নিয়েছে সুবিধা দেয়ার জন্য। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

35Shares

শেয়ার করুন