বুধবার, ১লা অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, দুপুর ২:২৫

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় প্যানেল চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি

0Shares

অভিযোগ অস্বীকার করলেন ফাহিমা খাতুন ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মইনুল ইসলাম, তদন্তের আশ্বাস ইউএনওর

স্টাফ রিপোর্টার, নাটোর: নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার ৩নং বাগাতিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোছাঃ ফাহিমা খাতুনকে দায়িত্ব থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন ইউনিয়নের একাধিক নির্বাচিত সদস্য । এ সংক্রান্ত একটি লিখিত আবেদন সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে দাখিল করা হয়েছে।
আবেদনে বলা হয়েছে, ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোঃ মজিবর রহমান দীর্ঘদিন ধরে পরিষদে অনুপস্থিত থাকায় প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছিল। পরে পরিষদের প্রথম সভায় গঠিত তিন সদস্যের প্যানেল চেয়ারম্যানের মধ্যে তৃতীয় ক্রমিকে থাকা মোছাঃ ফাহিমা খাতুনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় ।
অভিযোগকারীদের দাবি, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ফাহিমা খাতুন সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় না করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ মইনুল ইসলাম এবং তাঁর ছেলে এস এম মশিউর রহমান মিশুর সহযোগিতায় এককভাবে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আসছেন। এ ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থ অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
লিখিত আবেদনে আরও বলা হয়, পরিষদের আয়-ব্যয়ের হিসাব চাইলে তিনি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়ে দেন—জনপ্রতিনিধিদের এসব বিষয়ে কিছু বলার অধিকার নেই। হিসাব কেবল জেলা প্রশাসকের নিকট দেওয়া হবে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পূর্বেও পরিষদের সদস্যরা জেলা প্রশাসকসহ ইউএনওর কাছে অভিযোগ করেছিলেন। তবে সমন্বয় করার আশ্বাসে সে সময় দায়িত্বে বহাল থাকেন তিনি।
সদস্যদের অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে আবারও তিনি বয়স্ক, বিধবা, মাতৃত্ব ভাতা ও ভিডাবলিউ কার্ডধারীদের নিকট থেকে অবৈধ অর্থ গ্রহণ করছেন। এমনকি পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত ছাড়াই বিভিন্ন বিল-ভাউচারের মাধ্যমে পরিষদের আয়ের অর্থ আত্মসাত করছেন। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে ইউনিয়ন পরিষদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং প্রকৃত সুবিধাভোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগকারীরা দাবি করেছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ফাহিমা খাতুনের ছেলে মশিউর রহমান মিশু বলেন, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। আমি ইউনিয়ন পরিষদের কোনো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। অভিযোগকারীরা তাঁদের ব্যক্তিগত সুবিধা না পাওয়ার কারণে এমন মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।” প্যানেল চেয়ারম্যান মোছাঃ ফাহিমা খাতুন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,
“আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। আমি যে সকল প্রকল্প বাস্তবায়ন করি, তা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গেই সমন্বয় করে থাকি।”
ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ মইনুল ইসলাম বলেন,  “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। সরকারি নিয়ম মেনে আমি স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কাজ করি।”
এদিকে অনিয়মের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনসাধারণ।
জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের বাগাতিপাড়া ইউনিয়ন কমিটির সেক্রেটারি তৌফিকুল ইসলাম পল্লব বলেন, “ইতিপূর্বেও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, প্রমাণও হয়েছে। তাঁর মত একজন অযোগ্য মানুষকে এই চেয়ারে বসতে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা চাই যোগ্য কোনো কর্মকর্তা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করুন। তাহলেই ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হবে।”একই কথা বলেছেন বাগাতিপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মাহতাব উদ্দিন ।
অভিযোগ প্রসঙ্গে বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারুফ আফজাল রাজন বলেন, “স্থানীয় সরকার আইনে এমন অভিযোগ তদন্তের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে, রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

0Shares

শেয়ার করুন