বুধবার, ১লা অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, বিকাল ৩:২৭

শারদীয় দুর্গোৎসব: উৎসবের রঙে রাঙা বাংলার হৃদয়

0Shares

সন্তোষ দাশগুপ্ত (অমিত): বাংলার আকাশে যখন শরতের নীল মেঘ ভেসে বেড়ায়, কাশফুলের শুভ্রতা ছুঁয়ে যায় মন, তখনই জানি—দুর্গা আসছেন। দেবী দুর্গার আগমন শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি বাঙালির আত্মার উৎসব, সংস্কৃতির উচ্ছ্বাস, এবং সামাজিক সংহতির এক অনন্য প্রতীক। দুর্গোৎসবের পাঁচটি দিন যেন বাংলার হৃদয়ে এক মহাকাব্য রচনা করে। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে থাকে আবেগ, আনন্দ, আর মিলনের ছোঁয়া। প্রতিমা গড়ার শিল্প, আলোকসজ্জার নান্দনিকতা, আর ঢাকের বাদ্য যেন একসাথে বলে ওঠে—”এসো মা, এসো!” ধর্মীয় ভাবনা ও সামাজিক বাস্তবতা, দেবী দুর্গা শুধু অসুরনাশিনী নন, তিনি নারী শক্তির প্রতীক। তাঁর দশ হাতে অস্ত্র, কিন্তু চোখে করুণা। এই উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয়, নারীর শক্তি ও সম্ভ্রম রক্ষার বার্তা। আজকের সমাজে যখন নারী নির্যাতন, বৈষম্য ও অবহেলা চোখে পড়ে, তখন দুর্গা পূজা যেন এক নীরব প্রতিবাদও বটে। অর্থনীতি ও সংস্কৃতির মিলন দুর্গোৎসবের প্রভাব শুধু ধর্মীয় নয়, এটি একটি অর্থনৈতিক ইঞ্জিনও। প্রতিমা শিল্পী, আলোকসজ্জা কর্মী, পোশাক ব্যবসায়ী, খাবারের দোকান—সবাই এই সময়ে নতুন আশার আলো দেখেন। গ্রামীণ শিল্প থেকে শহুরে বিপণন, দুর্গা পূজা এক বিশাল অর্থনৈতিক চক্রের চালিকাশক্তি। প্রজন্মের চোখে পূজা আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে দুর্গোৎসব মানে শুধু পূজা নয়, এটি ফ্যাশন, ফটোশুট, ইনস্টাগ্রাম রিল, আর বন্ধুত্বের নতুন সংজ্ঞা। কিন্তু এর মধ্যেও তারা খুঁজে পায় ঐতিহ্যের ছোঁয়া, পরিবারের সঙ্গে কাটানো মুহূর্ত, আর একাত্মতার আনন্দ। বিসর্জনের বিষাদ দশমীর দিন যখন প্রতিমা বিসর্জন হয়, তখন এক অদ্ভুত বিষণ্ণতা ছেয়ে যায়। যেন মা চলে যাচ্ছেন, কিন্তু রেখে যাচ্ছেন আশীর্বাদ, শক্তি, আর আগামী বছরের অপেক্ষা। শারদীয় দুর্গোৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আনন্দের মাঝে আছে প্রতিবাদ, ঐতিহ্যের মাঝে আছে নবজাগরণ, আর ধর্মের মাঝে আছে মানবতা। এই পূজায় আসুন, আমরা শুধু দেবীকে নয়, নিজেদের ভেতরের শক্তিকেও জাগিয়ে তুলি। শুভ শারদীয়া!

লেখক, সন্তোষ দাশগুপ্ত (অমিত) ট্রাস্টি, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

0Shares

শেয়ার করুন