সোহেল রানা: বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) কর্মচারী তাজউদ্দীনের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে ২০ লাখ টাকার প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। তাজউদ্দীন বিসিআইসি কর্মচারী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বিসিআইসি যুব শ্রমিক লীগের সভাপতি। উল্লেখ্য,বিগত সরকারের আমলে তিনি তার পদ-পদবী ব্যবহার করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয়ে বিসিআইসিতে দাপট দেখাতেন। তার ভয়ে কর্মচারীরা সবসময় আতঙ্কে থাকতেন।
জানা গেছে, বিসিআইসির মুক্তিযোদ্ধা অফিসে কাউকে ঢুকতে দিতেন না এবং কেউ চাবি চাইলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতেন। এমনকি অফিসে বসেই দরজা বন্ধ করে মাদক সেবন করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বিগত সরকারের সময় তিনি প্রায়ই বাইরের লোকজনকে বিসিআইসিতে নিয়ে আসতেন এবং দাবি করতেন তিনি শেখ হেলালের আত্মীয়। এ সুযোগে সাধারণ কর্মচারীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন ও অত্যাচার চালাতেন। নিয়মিতভাবে কর্মচারীদের কাছ থেকে মাসিক নগদ চাঁদা নিতেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিসিআইসির নিরীহ কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাৎ করতেন। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে এবং পুলিশের প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তুলে সাধারণ কর্মচারীদের ব্ল্যাকমেইল করতেন।
অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর বেরিবাধ এলাকার কাশ্মীর গার্ডেন পাড়ায় তিনি মাদকের আড্ডাখানা চালান। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর সেখানে মাদক ব্যবসা, জুয়ার আসর ও দেহ ব্যবসা চলে। স্থানীয়রা জানান, তাজউদ্দীনকে প্রায়ই মাতাল অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। এক মুদি দোকানদার বলেন, “তাজউদ্দীন সরকারি চাকরি করেন, আবার মাদক ব্যবসাও চালান—এটা আমার বোধগম্য নয়।” জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, একজন সরকারি চাকরিজীবী যদি সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে রাষ্ট্রের উচিত তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে জেলে পাঠানো। কিন্তু তাজউদ্দীনের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না, কারণ তিনি প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেন এবং নিয়মিত উৎকোচ দিয়ে থাকেন। আরও অভিযোগ রয়েছে, তাজউদ্দীন তার প্রভাব খাটিয়ে চাকরি দেওয়ার নামে বহু মানুষের কাছ থেকে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
জানা গেছে, কয়েকজনের কাছ থেকে তিনি ১৫ লাখ টাকা করে নিয়েছেন। প্রতারণার কৌশল : তাজউদ্দীন তার নিজস্ব কিছু লোক ঠিক করে রাখত। এরপর সে চাকরিপ্রার্থীর (ক্লায়েন্ট) কাছে গিয়ে ফোন দিত তারই ঠিক করা লোকদের। ফোনে ওই লোকেরা পূর্বনির্ধারিত কথা বলত এবং তাজউদ্দীনকে সম্বোধন করত ‘স্যার’ বলে। তারা বলত, “স্যার আমার চাকরিটা দিয়ে দিয়েছেন এবং আমার পছন্দের জায়গায় পোস্টিংও দিয়েছেন। আপনি নিশ্চিন্তে স্যারের উপর ভরসা করতে পারেন।”এভাবেই শুরু হতো তাজউদ্দীনের প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ। মানুষের চাকরির লোভ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত সে। এ বিষয়ে বহুবার চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে তার কথাকাটাকাটি হয়েছে এবং স্থানীয়ভাবে একাধিকবার বিচার-শালিসও বসেছে। তবে শালিসে টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কখনো টাকা ফেরত দেয়নি। উল্টো টালবাহানা করে এবং নানা সময়ে ডিবি হারুনের নাম ভাঙিয়ে ভয়ভীতি দেখাত।
ভুক্তভোগী মেনু মিয়া জানান, তাজউদ্দীন তার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়েছে এবং তাকে না জানিয়ে তার খালাতো ভাইয়ের কাছ থেকেও বিসিআইসিতে চাকরি দেওয়ার নামে আরও ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। পরবর্তীতে মেনু মিয়ার খালা ও খালাতো ভাই ৩০/০৮/২০২৪ ইং তারিখে তাজউদ্দীনকে আরও ৫ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টাকা দেওয়ার প্রসঙ্গে গেলে তাজউদ্দীন তা অস্বীকার করে এবং উল্টো তাদের হুমকি ও অপমান-অপদস্ত করে। ফোন করলে ফোন ধরে না, বরং উল্টো বলে— “তোকে তুলে নিয়ে গুম করে দেব।” মেনু মিয়া আরও জানান, তার খালা ভিটেমাটি, গহনা, হাঁস-মুরগি বিক্রি করে অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করে তাজউদ্দীনের হাতে তুলে দেন। কিন্তু প্রতিশ্রুত চাকরি মেলেনি। চাকরি না পেয়ে এখন তার খালাতো ভাই দেউলিয়া হয়ে গেছেন। তিনি তাজউদ্দীনের বিচার চান।
একজন সাধারণ মানুষ ও তার পরিবারকে নিঃস্ব করে দেওয়া এই প্রতারণার ঘটনা কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, সামাজিকভাবেও চরম নিন্দনীয়। ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন। তাজউদ্দীনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কয়েক বার কল হলেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।