প্রিন্ট এর তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ৭:৩৭ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ৭:২০ অপরাহ্ণ
শান্তি-সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে হোমনায় শারদীয় দুর্গোৎসব: ৪৭ পূজামণ্ডপে কঠোর নিরাপত্তা : টহলে থাকবে বিজিবি

মোর্শেদুল ইসলাম শাজু, হোমনা: বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে আসা শারদীয় দুর্গোৎসব শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের নয়, এটি এখন সার্বজনীন উৎসব। পূজামণ্ডপে ঢাকের বাদ্য, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনিতে যখন চারপাশ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে, তখন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ মিলেমিশে আনন্দ ভাগাভাগি করে। সেই ঐতিহ্য বজায় রেখে এবারও কুমিল্লার হোমনায় ৪৭টি পূজা মণ্ডপে পূজা উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছে।
উৎসবকে ঘিরে পুরো হোমনায় এখন এক ধরনের আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে আনন্দের পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টিকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে প্রশাসন। প্রতিটি পূজা মণ্ডপেই সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় থাকবেন পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। পাশাপাশি এলাকায় বিজিবির টহলও অব্যাহত থাকবে।
নিরাপত্তার মান নির্ধারণে মণ্ডপগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩১টি সাধারণ, ১২টি গুরুত্বপূর্ণ এবং ৪টি অধিক গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুলিশের নিজস্ব গোয়েন্দা রিপোর্ট, মণ্ডপ পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় সূত্রের তথ্য যাচাই করে এ শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে।
সাধারণ ক্যাটাগরির পূজামণ্ডপে ৬ জন আনসার, গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে ৬ জন আনসার সদস্যের পাশাপাশি ৪ জন পুলিশ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে ৬ জন আনসার এবং পুলিশের ১ জন কর্মকর্তাসহ ৪ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে।
হোমনা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, হিন্দু সমাজের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশ প্রশাসন সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি মণ্ডপে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি ধর্মীয় মর্যাদা রক্ষায় সচেতনতা তৈরির জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমার সভাপতিত্বে এ সভায় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজনৈতিক দল, পূজা উদযাপন পরিষদ ও সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ইউএনও ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন, দুর্গাপূজা শান্তি, সম্প্রীতি আর ভ্রাতৃত্বের উৎসব। সবাই যেন মিলেমিশে আনন্দ করতে পারেন, সে লক্ষ্যেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমরা চাই, এবার আরও উৎসবমুখর পরিবেশে হোমনায় দূর্গাপূজা উদযাপিত হবে।
সভায় অন্য বক্তারা সবাই ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গোৎসব সম্পন্ন করার আহ্বান জানান।
বাংলার গ্রামীণ সমাজে শত শত বছর ধরে চলে আসা দুর্গাপূজা এখন আর কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি গ্রামীণ সংস্কৃতিরও অন্যতম বাহক। ঢাক-ঢোলের তালে, আরতি-প্রদীপে আর ভক্তিমূলক সংগীতে উৎসবের এই আমেজ মানুষকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে। হোমনায় পূজাকে ঘিরে গড়ে ওঠা সেই মিলনমেলা এ বছরও শান্তি ও নিরাপত্তার আবহে অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্ট সবাই।
Copyright © 2025 Jogajog Protidin. All rights reserved.