মশিউর লিটন,নাটোর: আবারো উত্তরের গুরুত্বপূর্ণ জনপদ নাটোরে প্রকাশ পেল একক আধিপত্যের রাজনীতি। জেলায় এক নেতার বাইরে অন্য কারো নামে পোস্টার, ব্যানার কিংবা মিছিল করা দীর্ঘদিন ধরেই নিষিদ্ধ ছিল—এমন অভিযোগ আগেই উঠেছিল। মঙ্গলবার বিকেলে এ নিয়ে নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ও আমরা বিএনপি পরিবার-এর উপদেষ্টা মো. আবুল কাশেমের সমর্থকরা মঙ্গলবার বিকেলে তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ ও একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের করলে সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর সমর্থকরা হামলা চালায় বলে নাটোরে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন নাটোর জেলা সাইবার দলের সাধারণ সম্পাদক গুলমেরাজ হ্যামলেট। এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা যুবদলের প্রচার সম্পাদক মোঃ শফিকুল ইসলাম মালেক সহ অন্যান্যরা। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা জানান, মঙ্গলবার বিকেলে জেলা সাইবার দলের সাধারণ সম্পাদক গুলমেরাজ হ্যামলেটের নেতৃত্বে আবুল কাশেমের সমর্থকরা শহরে আনন্দ শোভাযাত্রা ও ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ করেন। কার্যক্রম শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই ২০-২৫টি মোটর সাইকেল যোগে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত দুলু সমর্থকরা মিছিলে হামলা চালায় এবং লিফলেট ও ফেস্টুন কেড়ে নিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং মারধর ও তাণ্ডব সৃষ্টি করে। এতে মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরে। রাজনৈতিক এই সহিংসতায় জাতীয়তাবাদী সাইবার দল ও ছাত্রদলের অন্তত ৭ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। আহতরা হলেন, নাটোর জেলা সাইবার দলের সাধারণ সম্পাদক গুলমেরাজ হ্যামলেট, এনএস কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মীর হাবীব, জেলা ছাত্রদল নেতা কাউসার আলী, ছাত্রনেতা সাকিব, রিয়াদ সহ আরও অন্তত ৩ জন। এসময় আত্মরক্ষার্থে মিছিলকারীরা বিভিন্ন গলিতে আশ্রয় নেন। এ হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্তদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। অভিযুক্ত এই তালিকার মধ্যে রয়েছেন— জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান শাহিন, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাব্বিরুল ইসলাম চপল, আমানত, জেলা যুবদল সভাপতি এ. হাই তালুকদার ভালিম, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাত হোসেন সোহাগ, জেলা যুবদল নেতা ডলার, ওমর ফারুক, জেলা আওয়ামী যুবলীগ সভাপতি এহিয়া চৌধুরীর ম্যানেজার বাবু, স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত নেতা জুয়েল, কান্দভিটা এলাকার শীর্ষ চাঁদাবাজ সাকিব সহ আরো বেশ কয়েকজন। সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত উল্লেখিত ব্যক্তিদের বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় একাধিক সূত্র হামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এর আগে এক জনসভায় রুহুল কুদ্দুস দুলু ঘোষণা দেন "নাটোরে তার পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছাড়া অন্য কারো ব্যানার বা পোস্টার লাগানো যাবে না, লাগালে তা ছিঁড়ে ফেলা হবে।” সেই ঘোষণার পরপরই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত আবুল কাশেমের প্রচারণার পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন অল্প সময়ের মধ্যেই ছিঁড়ে ফেলা হয়। অথচ বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে রুহুল কুদ্দুস দুলু মরণ ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে মর্মে প্রচারণা চালিয়ে নেতাকর্মীদের থেকে দূরে থাকেন। সেই সময় নেতাকর্মীদের পাশে থেকে নাটোর বিএনপির হাল ধরেন মোঃ আবুল কাশেম। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জাতীয়তাবাদী সাইবার দলের নাটোর জেলা সাধারণ সম্পাদক গুলমেরাজ হ্যামলেট দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত ‘এক ব্যক্তির বন্দনা’ পরিত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা প্রচারণার অংশ হিসেবে আবুল কাশেমের নেতৃত্বে রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করলে দুলু ঘরানার সঙ্গে তার সম্পর্ক বৈরী আকার ধারণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারের হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত। এ ঘটনার পর নাটোরে আবারো স্পষ্ট হলো—দলীয় রাজনীতিতে দুলুর বন্দনা অক্ষুন্ন রাখতে ভিন্ন মত বা ভিন্ন নেতৃত্বের প্রচারণা সর্বশক্তি দিয়ে রুখার চেষ্টা চলছে। একই দলে থেকেও দলীয় প্রধানের ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচি প্রচারণায় বাধা আসছে। প্রতিনিয়ত মারাত্মক সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে নাটোর, যা জনমনে আতঙ্ক ও ক্ষোভ তৈরি করছে। মঙ্গলবারের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে এখনো কোনো পক্ষ থেকে থানায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে রাজনৈতিক হানাহানি ও সহিংসতা বন্ধে দলীয় প্রধানের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। একই অভিমত বিশিষ্ট জনের।