লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি ইউনিয়নের মতিরহাট এলাকার গৃহবধূ ছালেহা বেগমের (৫৪) হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। খুন হওয়ার এক সপ্তাহ পর ঘাতক মো. সেলিমকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেন। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সোমবার রাজধানীর আশুলিয়া এলাকা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেন। এর আগে ১৫ জুন রাতে স্বর্ণ ও মোবাইল ফোন লুটে নিতে ভাগ্নি জামাই সেলিমের হাতে ওই নারী খুন হন। মঙ্গলবার দুপুরে কমলনগর থানায় সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানান, গত ১৬ জুন উপজেলার মতিরহাট মেঘনা নদীর তীরবর্তী একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে ছালেহা বেগম নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে ফাতেমা বেগম বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে জেলা পুলিশ সুপার মো. আক্তার হোসেনের নির্দেশনায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সহযোগিতায় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুল হাসান ক্লুলেস এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ শুরু করে। একপর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সোমবার রাতে ঢাকার আশুলিয়া সেনা মার্কেট এলাকা থেকে ঘাতক সেলিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় স্থানীয় একটি জুয়েলারি দোকান থেকে নিহতের কাছ থেকে লুটে নেওয়া প্রায় এক ভরি স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তার সেলিম উপজেলার চরশামছুদ্দিন এলাকার নুরুল আমিনের ছেলে। পেশায় ভ্রাম্যমাণ শরবত বিক্রেতা সেলিম নিহত ছালেহার ভাগ্নি জামাই। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। খালা শাশুড়ির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন শেষে সঙ্গে থাকা স্বর্ণ ও মোবাইল লুটে নিতে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সেলিম ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। মঙ্গলবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন রাতে ভাগ্নি জামাই সেলিম জরুরি কথার বলে মুঠোফোনে কল করে খালা শাশুড়ি ছালেহাকে ঘরের বাহিরে ডেকে নেয়। একপর্যায়ে সে কৌশলে ছালেহাকে স্থানীয় একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে বিভিন্ন প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে। পরে ছালেহার সঙ্গে থাকা স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইল লুটে নিতে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে। একপর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর স্বর্ণ ও মোবাইল লুটে নিয়ে সে পালিয়ে গিয়ে ঢাকায় আত্মগোপনে থাকে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুন দুপুরে পুলিশ কমলনগর উপজেলার মতিরহাট মেঘনা নদীর তীরবর্তী একটি পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে ছালেহা বেগম (৫৪) নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেন। তিন ছেলে ও এক মেয়ের জননী নিহত ছালেহা উপজেলার চরকালকিনি ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ড এলাকার মৃত শাজাহানের স্ত্রী। স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি স্থানীয় ছিদ্দিকুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে গোপনে বিয়ে করেন। এটাকে কেন্দ্র করে ছেলেদের সাথে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এরপর থেকে ছেলেরা বাড়িতে মাকে বৃদ্ধ নানীর সঙ্গে রেখে অন্যত্র স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। ওই বাড়িতে বৃদ্ধা মায়ের সাথে ছালেহা অনেকটা নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতেন।