
পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনা…..
দেশের সর্ববৃহৎ বিনোদন কেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। পর্যটনশিল্পখ্যাত এ কক্সবাজারে নৈসর্গিক সৌন্দর্য অবলোকনে দেশ বিদেশ থেকে ছুটে আসে লাখ লাখ ভ্রমণ পিপাসুরা।
সুখবর হচ্ছে এরইমধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা লক্ষ্মীপুরের রামগতির উপকন্ঠ আলেকজান্ডার বাজার ঘিরে গড়ে উঠেছে আরেকটি পর্যটনশিল্প এলাকা। এখানকার মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধের এক কিলোমিটার এলাকার পুরোটাই এখন বিনোদন স্পর্ট।
এখানে ঘুরতে আসা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য দর্শনের অন্যতম বিশেষত্ব হচ্ছে, সন্ধ্যা ঘনিয়ে যখন রাত আসে, পুরো এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এলাকায় সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা সৌর-বিদ্যুতের বাতির আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে সৈকতটি; যা অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।
কক্সবাজারের আদলে গড়ে ওঠা এ বিনোদন স্পর্ট যেন “রামগতির উপকন্ঠে একটুকরো কক্সবাজার” হিসেবেই দেখছেন এখানে ঘুরতে আসা ভ্রমণপিপাসুরা। ইতোমধ্যে
আলেকজান্ডার মেঘনা বিচ নামে পরিচিতি পাওয়া এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক ও দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয় ওঠে।
ঈদের ছুটিসহ অবসরে পরিবার নিয়ে বিনোদনের জন্য মেঘনাপাড়ের এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এখন রূপ নিয়েছে মিনি কক্সবাজারে। এখানে মেঘনার তীরে নদীর স্বচ্ছ জলরাশি ও ঢেউ, হিমেল হাওয়া, চরাঞ্চলের গরু-মহিষ ও ভেড়ার বিচরণ দৃশ্য এবং তাদের সঙ্গে রাখালের বন্ধুত্ব জেলেদের রুপালি ইলিশ শিকারের দৃশ্য হয়ে উঠেছে প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্র।এছাড়া মেঘনার স্বচ্ছ পানির স্পর্শ, সূর্যাস্তসহ নান্দনিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। পর্যটকরা এখানে এসে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের মতো পরিবেশ পাচ্ছেন। এখানে রেস্টুরেন্ট গড়ে ওঠায় অনেকের কর্মসংস্থানও হয়েছে। যে কারণে মেঘনাপাড়কে আরো বেশি সমৃদ্ধ ও আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকার সরকারি অনুদানে কমলনগরের ভাঙনকবলিত সাড়ে ৪ কিলোমিটার ও রামগতিতে এক কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে আলেকজান্ডার বাজার,রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স রক্ষা পায়।
এদিকে, আলেকজান্ডার বাজার ঘিরে নির্মিত এক কিলোমিটার বেড়ি বাঁধের শুরু থেকে এখানে ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় জমানো শুরু করেন; যা গেল ঈদকে কেন্দ্র করে বেড়েছে বহুগুণ। এছাড়া প্রায় সারা বছরই এখানে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বনভোজন ছাড়াও সাধারণ মানুষের আনাগোনা থাকে। অনেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের ছবি তুলেও পড়ালেখার পাশাপাশি করছেন বাড়তি আয়।তবে পর্যটকদের জন্য এখনো এখানে গড়ে উঠেনি হোটেল-মোটেল, পয়োনিষ্কাশন ও নিরাপত্তাব্যবস্থা। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে পর্যটনের সব সুবিধা নিশ্চিত করা হলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা বদলে যাবে বলে মন্তব্য করছেন পর্যটকরা।
শুক্রবার সরেজমিন গিয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা থেকে ঘুরতে আসা সিনিয়র সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন ও তার সাথে থাকা স্থানীয় একটি কলেজের এক অধ্যক্ষ, একজন ব্যংকার ও একজন ব্যবসায়ী সহ নোয়াখালী মাইজদী ও সোনাপুর থেকে ঘুরতে আসা কয়েকজন দর্শনার্থী বলেন, গণমাধ্যম ও বন্ধু-বান্ধবদের মাধ্যমে জেনে এখানে বেড়াতে এসেছি। আসলে জায়গাটা অনেক সুন্দর ও মনোরম লাগছে। বিশেষ করে সূর্যাস্ত, নির্মল বাতাস ও নদীতে উচু ডেউয়ে হেলে-দুলে জেলেরা মাছ শিকার করার মনোমুগ্ধকর পরিবেশ দারুণভাবে উপভোগ করেছি। বিশেষ করে ট্রলারে করে নদী পাড় হয়ে মেঘনার বুকে জেগে ওঠা চর আবদুল্লায় গিয়েছি আমরা। সেখানে মহিশ ও ভেড়ার পাল এবং তাদের বিচরণ ভূমি, নদীর স্বচ্ছ পানি দারুণ আকৃষ্ট করেছে আমাদের।
স্থানীয় সংবাদকর্মী নিজাম উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, চার যুগের বেশি সময় ধরে মেঘনার ভাঙন অব্যাহত থাকার পর যখন আলেকজান্ডার বাজার বিলীনের পথে ঠিক ওই সময়ে তৎকালীন সরকারের দেয়া ১ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ থেকে কমলনগরে সাড়ে চার কিলোমিটার ও রামগতিতে এক কিলোমিটার এলাকা বেড়ীবাঁধ দেয়া হয়। এতে আলেকজান্ডার বাজার, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ও ৩১ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ভাঙন থেকে বেঁচে যায় । অত্যান্ত টেকসই করে বেড়ীবাঁধ কাজটি সম্পন্ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা । সেই থেকেই বেড়ীবাঁধের এক কিলোমিটার এলাকা হয়ে ওঠে নান্দনিক ও মনোমুগ্ধকর। বর্তমানে আরও ৩১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। কাজটি সমাপ্ত হলে এটি হবে দেশের বৃহত পর্যটনশিল্প এলাকা।
এদিকে মেঘনা নদীর ভাঙন রোধকল্পে কমলনগরের মতিরহাট থেকে রামগতির বয়ারচর পর্যম্ত মেঘনা নদীর ৩১ কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধের জন্য ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে ৯৭ টি প্যাকেজে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। ইতোমধ্যে তীর রক্ষা বাঁধের চল্লিশ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী কাজ সম্পন্ন হলে পুরো ৩১ কিলোমিটার এলাকা হবে পর্যটনশিল্পের মহা সম্ভাবনাময় বিনোদন স্পর্ট এমনটাই আসা করা হচ্ছে। তবে দুর্দান্তগতিতে বাঁধের কাজ চলছে জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলছেন আগামী বর্ষার আগে সন্তোষজনক কাজ সম্পন্ন হবে; এতে ভাঙন থেকে বেঁচে যাবে অনেক স্থাপনা, ফসলি জমি সহ ঘরবাড়ি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় , পাথরে তৈরি করা ব্লক ফেলে বেড়িবাঁধের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। ডাম্পিংয়ের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
সূত্র জানায়, বিগত তিন দশক ধরে মেঘনা নদীর ধারাবাহিক ভাঙনে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলার প্রায় ২৪৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ সময় ভিটে-মাটি হারিয়েছে লক্ষাধিক মানুষ।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ উজ্জামান খান বলেন, ‘মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধের কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে আমরা কাজ করছি। এরই মধ্যে ৪০ শতাংশ কাজ দৃশ্যমান। বাকি ৬০ শতাংশ কাজ চলমান রয়েছে। কমলনগরের ইউএনও মো. রাহাত উজ জামান ও রামগতির ইউএনও সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, আশা করি পাউবোর কর্মকর্তারা এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের বেড়িবাঁধটি অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের উপহার দিতে পারবেন।