শনিবার, ৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, রাত ৩:১৪

মেঘনায় কাঙ্খিত ইলিশ ধরা না পড়ায়, ঈদ আনন্দ নেই জেলে পরিবারে

0Shares

একদিন পরেই ঈদুল আজহা কুরবানির  ঈদ। ঈদকে ঘিরে সামর্থ্যবানরা কুরবানি করার জন্য পশু (গরু) কিনেছেন ইতোমধ্যে। পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন পোশাক কেনাকাটাসহ ঈদ উদযাপনে বাড়তি যতো আয়োজনও থাকবে সাথে। জেলার নামি-দামি বিপনি বিতানগুলোতোও  চলছে  কেনাকাটার ধুম। সর্বস্তরের মানুষ প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগিতে নিয়েছেন প্রস্তুতি ।  বিশেষ এ দিনটিতে শিশু, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাই সাজবে নতুন নতুন সাজে।


তবে ভিন্ন চিত্র লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরের অম্তত ৩০ হাজার জেলে পরিবারে।  নদীতে মাছ নেই তাই এখানকার জেলে পরিবারের মাঝে ঈদের আনন্দও নেই।  ঈদে নতুন পোশাক তো দুরের কথা পরিবারে দু’বেলা দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করাই যেখানে কষ্টসাধ্য সেখানে কুরবানির ঈদে দু’টুকরো গোস্ত পাতে ওঠা যেন শুধুই  কল্পনা।

যেখানে ভরা মওসুমে মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়া ইলিশ মাছ বিক্রি করে জেলেপল্লিতে ঈদ উৎসবের আমেজ থাকার কথা। সেখানে চরম সঙ্কটের মুখে অভাব অনটনে জীবন-যাপন করছেন জেলেরা। চলছে নীরব হাহাকার। ইলিশ শুন্য মেঘনায় দিনরাত জাল ফেলে যে পরিমাণে ইলিশ শিকার করছেন তাতে খরচের টাকাও ওঠাতে পারছেননা জেলেরা। এতে চরম হতাশা আর দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটছে তাদের।

কমলনগরের মেঘনাপাড়ের মতিরহাট, কটরিয়া, বাত্তিরখাল, লুদুয়া ও পাটারীরহাট ও রামগতির  আলেকজান্ডার, সেন্টারখাল ও রামগতি বাজার মাছ ঘাটসহ ছোট বড় অনেকগুলো ঘাটে এখন নেই আগের মতো কর্মচাঞ্চল্য। আড়তদারদের মাছের বাক্সগুলো খাঁ খাঁ করছে। আড়তে বসে অলস সময় পার করছেন তারা। দু’এক ঝুড়ি মাছ ঘাটে আনা হলেও আগের মতো নেই হাঁকডাক। জেলেদের পাশপাশি আড়তদারেরাও রয়েছেন বিপাকে। ফলে জেলে পরিবারে এবার ঈদের আমেজ নেই বললেই চলে।

কথা হয় মতিরহাট মাছঘাট এলাকার জেলে নিজাম উদ্দিনের কন্যাসন্তান শিশু মরিয়মের সঙ্গে। শিশুটি যোগাযোগ প্রতিদিনকে জানায়, এলাকার অন্য সহপাঠীরা ঈদের নতুন জামা কিনেছে। সেও বাবার কাছে নতুন জামার বায়না করেছিল।  বাবা তাকে বলেছিলেন জামা কিনে দিবেন; কিন্তু  এখনো কিনে দেননি। তাই মন খারাপ তার।
কথা হয় শিশুটির পিতা নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে, তিনি অশ্রু ছলছল চোখে বলেন, মার্চ এপ্রিল দুই মাস  নদীতে মাছ শিকারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল।

বুকভরা আসা ছিল নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়বে।  কিছুটা হলেও সংসারের অভাব গোছাতে পারবেন । কিন্তু অভিযান শেষ হয়ে একমাস অতিবাহিত হলেও  এখনো  নদীতে ইলিশের দেখা নেই। তিনি বলেন, রাত-দিন নদীতে যাই, জালও ফেলি কিন্তু মাছ পাইনা। কালকে ঈদ সন্তানকে বলেছিলাম মাছ পাইলে নতুন জামা কিনে দিব, কিন্তু  এখন তাও সম্ভব হচ্ছেনা।  ‘বড়ো কপালপোড়া বাবা আমি’।
তিনি ভারাক্রান্ত কন্ঠে আরও বলেন, এমন পরিস্থিতিতে    যেখানে দু’বেলা দু’মুঠো ভাতই জুটছে না সেখানে সন্তানের বায়না পুরণের কপাল আমার নেই। ঈদের আনন্দ তো দুরের কথা।

ঈদে পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টায়  বৃহসপতিবার রাতভর নদীতে ইলিশ শিকারে যাওয়া নাছিরগঞ্জ এলাকার জেলে মো. লোকমান মাঝি বলেন, রাত ৯ টার দিকে আমরা পাঁচজন জেলে নদীতে ইলিশ শিকারে গিয়েছিলাম। সকাল ৬টা পর্যন্ত নদীতে চারবার জাল ফেলেছি।  ১৫টি ঝাটকা ইলিশ পেয়েছি।  ঘাটে এনে ২ হাজার ১০০ টাকা বিক্রি করেছি। অথচ জ্বালানি তেল খরচ হয়েছে ২ হাজার টাকা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার পরে আশা করেছিলাম নদীতে অনেক মাছ ধরতে পারব। কিন্তু গতরাত থেকে সকাল পর্যন্ত জাল ফেলে আশানুরূপ ইলিশ পাইনি। যে কারণে  আমাদের জেলে পরিবারে এবার ঈদ আনন্দ নেই।

একইভাবে রামগতি  মাছ ঘাট এলাকার জেলে আলাউদ্দিন মাঝি  বলেন, অভিযানের সময় আমরা নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত ছিলাম। আশায় ছিলাম, অভিযান শেষে নদীতে গিয়ে মাছ ধরে বিক্রি করে আগের দেনা পরিশোধ করবো। ঈদে ছেলে মেয়েদের  মুখে হাসি ফোটাব।  কিন্তু নদীতে এখন মাছের যেই অবস্থা তাতে ঈদ আনন্দ তো দুরের কথা মহাজনের দেনার দায়ে এখন দেশ ছাড়তে হবে।

জেলে নবিয়ল মাঝি  বলেন, একদিন পর  ঈদ। অনেক স্বপ্ন ছিল অভিযান শেষে  নদীতে প্রচুর পরিমানে মাছ পাওয়া যাবে। সংসার চলতে তেমন একটা অসুবিধা হবেনা। এখন নদীতে ইলিশ ধরা না পড়ার কারণে  পকেট খালি। যে কারণে এবারের ঈদে পরিবারের জন্য কিছুই কেনাকাটা করা সম্ভব হয়নি। অর্থাভাবে ঈদ
আনন্দটাই যেন মাটি হয়ে গেছে।  তার মতো মেঘনাপাড়ের অন্যান্য জেলে পরিবারেরও একই রকম বিষাদের যন্ত্রণা বিরাজ করছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতির মেঘনা নদীতে অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ হাজার জেলে নদীতে মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহ করেন। এরমধ্যে  নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৩০ হাজার। মৎস্য বিভাগের মতে, দেশে ইলিশের চাহিদার প্রায় ১৫ ভাগ রামগতি কমলনগর থেকেই উৎপাদিত হয়।

0Shares

শেয়ার করুন