বুধবার, ৪ঠা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, দুপুর ১:৫২

সাত দিনে সুস্বাস্থ্যর বীজ বোনা: বাগাতিপাড়ায় জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ উদযাপন

18Shares

আব্দুল মজিদ: “শিশু থেকে প্রবীণ, পুষ্টিকর খাবার সর্বজনীন”-এই মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় শুরু হয়েছে জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ ২০২৫। পুরো উপজেলাজুড়ে যেন তৈরি হয়েছে এক সজীব স্বাস্থ্য-সচেতনতামূলক উৎসব। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে স্থানীয় প্রশাসন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-সবাই যেন এক ছাতার নিচে এসে দাঁড়িয়েছে একটি সুন্দর, পুষ্টিসমৃদ্ধ ভবিষ্যতের আশায়।
শুভ উদ্বোধন: স্বাস্থ্য, সচেতনতা আর সম্প্রীতির মিলনমেলা-
২৮ মে বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে র‌্যালি ও আলোচনা সভার মাধ্যমে সপ্তাহের শুভ সূচনা হয়। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সূচনা মনোহরা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হা-মীম তাবাসসুম প্রভা, যিনি শিশুদের হাতে রঙতুলি ধরিয়ে দিয়ে উদ্বোধন করেন চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার।
ডা. খন্দকার মাহাবুবা জান্নাতের প্রেজেন্টেশন পুষ্টি বিষয়ক জটিল তথ্যগুলোকে সহজভাবে উপস্থাপন করে শ্রোতাদের মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন ডা. ফাকেহা জাবীন, যার প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল প্রাণবন্ত।
সপ্তাহজুড়ে প্রাণের আয়োজন-
এই সাতদিন শুধু অনুষ্ঠান নয়, বরং পুষ্টি নিয়ে এক ধরনের সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে চিত্রাঙ্কন, রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতা। শিক্ষার্থীরা তাদের আঁকায় তুলে ধরছে স্বাস্থ্যকর খাবার, সুষম খাদ্য তালিকা এবং পুষ্টির গুরুত্ব।
ধর্মীয় দিক থেকেও নেওয়া হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ। ইসলামীক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় মসজিদে খুতবার সময় পুষ্টি বিষয়ক বয়ান প্রদান, মন্দির ও গির্জায় আলোচনা সভা এবং ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এতে যেমন একতা তৈরি হয়েছে, তেমনি সমাজের প্রতিটি স্তরে পৌঁছে যাচ্ছে সঠিক তথ্য।
অন্তর্ভুক্তি আর মানবিকতার ছোঁয়া-সবচেয়ে হৃদয়ছোঁয়া উদ্যোগ ছিল এতিমদের মধ্যে উন্নত মানের খাবার বিতরণ এবং গর্ভবতী নারী ও শিশুমায়েদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য সামগ্রী প্রদান। এতে শুধু স্বাস্থ্য নয়, মানবিকতাও উঠে এসেছে এই পুষ্টি সপ্তাহের মূল চেতনায়।
একটি সচেতন ভবিষ্যতের পথে-
ডা. সূচনা মনোহরা বলেন, “শুধু অসুখ হলেই ডাক্তার দেখানো নয়, আগে থেকে সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলাটাই হলো টেকসই স্বাস্থ্যব্যবস্থার মূল স্তম্ভ। আমরা চাই প্রতিটি পরিবার হোক পুষ্টি সচেতন।”

বাগাতিপাড়ার এই আয়োজন যেন প্রমাণ করে দিল-জনগণের মাঝে সঠিক বার্তা পৌঁছে দিতে হলে দরকার সম্মিলিত উদ্যোগ, উদ্ভাবনী চিন্তা আর আন্তরিকতা।
শেষ কথা হলো-এই পুষ্টি সপ্তাহ হয়তো সাতদিনের, কিন্তু এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন আর অপুষ্টিতে না ভোগে, সেই প্রত্যাশায় বাগাতিপাড়ার পথচলা এক সাহসী দৃষ্টান্ত।

 

18Shares

শেয়ার করুন