রোকনুজ্জামান সবুজ জামালপুরঃ কোচিং সেন্টার পরিচালনা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে জামালপুরের ইসলামপুর বেনুয়ার চর মোশারফ হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের মধ্যে মতবিরোধ থেকে শুরু হওয়া উত্তেজনা রূপ নেয় বিক্ষোভ ও অবরোধে। প্রধান শিক্ষককে ঘিরে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। এ অবস্থায় হস্তক্ষেপ করেন ইসলামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ইমরুল হাসান, যিনি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। শনিবার (১২অক্টোবর) দুপুরে পর্যন্ত চলে এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি। জানা যায়,গত বুধবারে বিশেষ সভায় প্রধান শিক্ষক নূর আলম শাহিন তাঁর পরিচালিত কোচিং সেন্টারে পাঠদানের জন্য সহকারী শিক্ষক হযরত আলীকে অনুরোধ করেন। কিন্তু হযরত আলী নিজে পৃথকভাবে প্রাইভেট পড়ানোর কথা জানিয়ে এতে অসম্মতি জানান। এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি শুরু হলে তা উত্তপ্ত বাক্যে রূপ নেয়। ওই ঘটনার জেরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করেন এবং তাঁর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাই,শিক্ষার্থী ছাড়াও স্থানীয় জনসাধারণ ও বহিরাগত মিলিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন প্রায় সহস্রাধিক মানুষ। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরপরই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান এএসপি ইমরুল হাসান। তিনি নিজে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন এবং উভয় পক্ষকে আলাদা করে বক্তব্য শুনে উত্তেজনা প্রশমনে নেতৃত্ব দেন। সহকারী শিক্ষক হযরত আলী অভিযোগ করে বলেন,“গত বুধবার অফিস কক্ষে বিশেষ এক বৈঠকে প্রধান শিক্ষক আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং গায়ে হাত তোলেন। এর আগেও তিনি আরও কয়েকজন সহকর্মীকে লাঞ্ছিত করেছেন। আমি তাঁর বিচার দাবি করছি। এমন একজন শিক্ষকের হাতে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিরাপদ নয়।” অন্যদিকে প্রধান শিক্ষক নূর আলম শাহিন বলেন, “সহকারী শিক্ষক হযরত আলী দীর্ঘদিন ধরে রাতের বেলায় গোপনে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন। এলাকার অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমি বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করি। সে উত্তেজিত হয়ে আমাকে মারতে আসে। সহকর্মীরা বাধা না দিলে বড় কিছু ঘটতে পারত। আমি তাৎক্ষণিকভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। আজ পরিকল্পিতভাবে বহিরাগতদের নিয়ে এসে আমাকে মারধর করা হয়েছে,অফিসের আসবাবপত্র ভাংচুর ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।” ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এএসপি ইমরুল হাসান বলেন,“শিক্ষাঙ্গন কোনো রাজনৈতিক মাঠ নয়, বা ব্যক্তিগত বিরোধ নিষ্পত্তির স্থানও নয়। এখানে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না। আমরা দুই পক্ষের বক্তব্য শুনেছি এবং পরিস্থিতি শান্তভাবে নিয়ন্ত্রণে এনেছি। তিনি আরও বলেন,“প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমি ইতোমধ্যে ইউএনও মহোদয় ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।” এএসপি ইমরুল হাসান আরও সতর্ক করে বলেন,“একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এমন বিশাল জনসমাগম ও উত্তেজনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারবে না। ভবিষ্যতে যাতে এমন কিছু না ঘটে,সে বিষয়ে আমরা কঠোর নজরদারিতে থাকব।” এ সময় স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির নেতা লাল মিয়া মাস্টার,উপজেলা যুবদল নেতা হামিদুর রহমান মলিন, ইউনিয়ন যুবদল নেতা রাজু আহাম্মেদ,লুৎফর রহমান, বুলবুল আহাম্মেদ,পলাশ মিয়াসহ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পুলিশের সাথে তারা পরিবেশ শান্ত করার চেষ্টা করেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত থাকলেও বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবকমহলে রয়ে গেছে চাপা উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা। স্থানীয় সচেতন মহল ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দ্রুত সমাধানের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।