মঙ্গলবার, ১২ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, সন্ধ্যা ৭:৩২

শিক্ষার মানোন্নয়নে বাগডুমুর ইসলামিয়া আলীম মাদ্রাসার নবনিযুক্ত সভাপতি সোহেল মাহমুদ রঞ্জু)র মহতী পদক্ষেপ  

0Shares

শেখ মোঃ এনামুল হক, সিরাজগঞ্জ ব্যুরো চীফঃ গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি বিলুপ্ত করার পর ধীরে ধীরে সকল প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি সচল করতে থাকে শিক্ষা অধিদপ্তর। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৯ জুলাই ২০২৫ইং তারিখে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নে অবস্থিত বাগডুমুর ইসলামিয়া আলীম মাদ্রাসায় ৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনে অনুমোদন করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। বাগডুমুর ইসলামিয়া আলীম মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটিতে এসএম সোহেল মাহমুদ রঞ্জুকে সভাপতি, অধ্যক্ষ আবুল হাশেম খানকে সদস্য সচিব, মো: জাহিদুল ইসলামকে শিক্ষক প্রতিনিধি ও মো: আলতাফ হোসেন ভূইয়াকে অভিভাবক সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করেন। বাগডুমুর ইসলামিয়া আলীম মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার সাথে সাথে মাদ্রাসায় শিক্ষার মনোন্নয়নে জন্য বহুলী ইউনিয়নের বাগডুমুর গ্রাম সহ আশেরপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের সর্বস্তরের জনসাধারণকে নিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে চতুর্থমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। দায়িত্বের ৭দিনের মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানটি সিসি ক্যামেরায় বেষ্টিত করেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের সাথে এলাকার মুরুব্বি, যুবক ও অভিভাবকদের নিয়ে সমন্বয়ে একটি পরিচিত সভাও করেছেন। অভিভাবক পরিচিত সভায় মাদ্রাসার শিক্ষার মানোন্নয়নে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।

সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে-শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে মাসিক সমাবেশ এর ব্যবস্থা। প্রতিদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করুন। প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন আদায়ের ব্যবস্থা। সাপ্তাহিক মূল্যায়ন পরীক্ষা ব্যবস্থা, উত্তর পত্র অভিভাবকদের কাছে প্রেরণ, পরামর্শ এবং স্বাক্ষরসহ উত্তরপত্র শিক্ষককের নিকট প্রেরণ পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। এরই প্রেক্ষিতে পিতা-মাতা এবং গৃহশিক্ষকের ভূমিকার প্রাধান্য বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের এবং গ্রহণের ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের আশায় হোম ভিজিটিং এর ব্যবস্থা। প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীদের জন্য একজন করে শিক্ষক প্রধান কাউন্সিলিং এর আওতায়। পারিবারিক, সামাজিক ও বিদ্যালয়ের যাবতীয় সমস্য কাউন্সিলিং এ নিয়োজিত শিক্ষকের অবহিতকরণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।  শিক্ষার্থীদের অবশ্যই বিদ্যালয়ের উপস্থিতি নিশ্চিত করনে ডিজিটাল হাজিরার ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীদের  নিরাপত্তার জন্য প্রতিষ্ঠানের সব জায়গায় সিসি ক্যামরা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ। অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে মাসিক সমাবেশ এর ব্যবস্থা। অগ্রসর শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে দলনেতা করে প্রতি ৫ জন অনগ্রসর শিক্ষার্থীর সাথে এক জন অগ্রসর শিক্ষার্থীর সাথে পাঠদানের ব্যবস্থা।  ক্লাস নির্ভর পাঠদান। অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তাগিদে আলাদা কোচিং এর ব্যবস্থা। প্রতি ১০জন শিক্ষার্থীদের জন্য ১ জন করে শিক্ষক ও ১ জন অগ্রসর শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা।  অভিভাকদের অবশ্যই সাপ্তাহিক শ্রেণি শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের সাথে পরামর্শ প্রদান পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। বিভিন্ন উপকরণ ও আনন্দ দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো। মাদ্রাসাটি আরো জনপ্রিয়তা বাড়াতে ২০২৬ সালের ক্যাডেট স্কুল চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় । তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে স্থানীয় বাগডুমুর গ্রামের আমেরিকা প্রবাসী ইঞ্জি: মরহুম আব্দুল মজিদ খান অত্র এলাকায় শিক্ষা বিস্তার করার লক্ষ্যে ১২৫ শতক জমিতে প্রথমে এবতেদায়ী মাদ্রাসা গড়ে তোলে। প্রতিষ্ঠাতাকালীন থেকে প্রতিষ্ঠাতা সুপার মো: আবুল হাশেম খান এর সার্বিক প্রচেষ্টায় এবতেদায়ী মাদ্রাসাটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে ১৯৯৩ সালে দাখিল পড়ানোর সুযোগ পেলে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভূক্ত অর্জন করেন।

দাখিল পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা ভালো ফলাফল করার জন্য  ২০০২ সালে আলীম পর্যন্ত উন্নতি হয়।  ২০০৬ সালে আলীমের একাডেমীর স্বীকৃতি লাভ করে। বরাবরই দাখিল ও আলীম পরীক্ষায় কৃতকার্যের সহিত শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। ২০২৫ সালে দাখিল পরীক্ষায় ফলাফল একটু খারাপ হলেও ২৭জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৮জন উত্তীর্ণ হয়। ২০২৪ সালে আলীম পরীক্ষায় ২৮জনের মধ্যে ২৬জন সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়। ২০২৩ সালে দাখিল ও আলীম পরীক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থীরা উত্তীর্ণ হয়। বাগডুমুর ইসলামিয়া আলীম মাদ্রাসায় প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ মো: আবুল হাশেম খান বলেন, ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বিনাবেতনে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেছি। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল মজিদ খান এর অর্থায়নে ৪টি টিনসেট তৈরী করে দিয়েছিলেন। টিনসেট ঘরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেছি। ২০০২ সালে একতলা ভবন ও ২০২২ সালে ৪র্থ তলা বিল্ডিং মাদ্রাসায় গড়ে উঠেছে। ক্লাস রুমের সমস্যা না থাকলেও বর্তমানে ২১জন সহকারি শিক্ষক ও ৫জন কর্মচারীদের দিয়ে ৫৩২জন শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। বর্তমান সভাপতি এসএম সোহেল মাহমুদ রঞ্জু’র দিক নির্দেশনায় শিক্ষার মানোন্নয়নে আমি সহ আমাদের সকল শিক্ষক, কর্মচারীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবো। বাগডুমুর ইসলামিয়া আলীম মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এসএম সোহেল মাহমুদ রঞ্জু জানান, এই মাদ্রাসায় সভাপতি নিযুক্ত করার জন্য প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সম্মানিত চেয়ারম্যান ও রেজিস্টারকে আরো ধন্যবাদ জানাচ্ছি, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সম্মানিত সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ভাই, জেলা বিএনপির সম্মানিত সভাপতি জনাবা রোমানা মাহমুদ (সাবেক এমপি) জেলা বিএনপির বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক, জনতার মেয়র খ্যাত জনাব সাইদুর রহমান বাচ্চু ভাই, গ্রামবাসী ও এলাকাবাসীকে। পাশাপাশি স্মরণ করছি এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার মরহুম আব্দুল মজিদ খান সাহেবকে, আরো স্মরণ করছি এই গ্রামেরই মুরুব্বী যারা ইতিমধ্যে পরলোক গমন করেছেন এদের মধ্যে মরহুম আফজাল হোসেন খান, মরহুম আব্দুস সোবহান শেখ, মরহুম আব্দুর রহিম মাস্টার, মরহুম আব্দুল করিম খান মাস্টার, মরহুম আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া, মরহুম ইব্রাহিম শেখ, মরহুম আব্দুল হামিদ সেখ(দুদু মাস্টার), মরহুম আফসার আলী ভূঁইয়া প্রমুখসহ আরো যারা এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সময় মরহুম ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মজিদ সাহেবের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আজ এই প্রতিষ্ঠানটি হাটি হাটি পা পা করে আলিম মাদ্রাসা পরিণত হয়েছে, এই মাদ্রাসাটির সকল প্রকার শিক্ষা ও পরিবেশগতমান মান উন্নয়নে নিজেকে নিজে রাখিবো। শিক্ষা ও পরিবেশের মান উন্নয়নে মাদ্রাসার শিক্ষক ও কর্মচারী, অভিভাবক বৃন্দ, গ্রামবাসী , এলাকাবাসী, স্থানীয় প্রশাসন এবং সর্বোপরি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সহযোগিতা একান্ত ভাবে কাম্য। যদি এই সকল সহযোগিতা পাই তাহলে এই মাদ্রাসাটিকে সিরাজগঞ্জের একটি মডেল মাদ্রাসায় পরিণত করতে পারবো বলে আশা রাখি।

0Shares

শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো