বৃহস্পতিবার, ৩১শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, সকাল ১১:২৬

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনায় বাগাতিপাড়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া 

12Shares

আব্দুল মজিদ, নাটোর নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় বর্ষীয়ান রাজনৈতিক নেতা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা জনাব হাফিজুর রহমান হাফিজকে একটি শিক্ষা-সামাজিক অনুষ্ঠানে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনায় চরম ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষাবিদদের একাংশ এই ঘটনাকে ‘চরম অসম্মানজনক’ ও ‘অমার্জনীয়’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। সোমবার (২৮ জুলাই) বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ ও ২০২৩ সালের এসএসসি ও এইচএসসিতে উত্তীর্ণ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। জেলা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের যৌথ আয়োজনে এবং উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পারফরমেন্স বেজড গ্র্যান্টস ফর সেকেন্ডারি ইন্সটিটিউশন (PBGSI) স্কিমের আওতায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ৩৯ জন শিক্ষার্থীকে ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের পক্ষ থেকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজকে অতিথি হিসেবে দাওয়াত দেওয়া হয়। শুরুতে তাকে মঞ্চে আসন গ্রহণ করতেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু অনুষ্ঠানের মাঝপথে এক কর্মকর্তার নির্দেশে তাকে মঞ্চ ত্যাগ করে নিচে বসতে বলা হয়—যা উপস্থিত জনতার চোখে অপমানজনক আচরণ হিসেবে প্রতিভাত হয়। ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও শিক্ষক সমাজের অনেকে এই ঘটনাকে একজন বর্ষীয়ান জনপ্রতিনিধির প্রতি গুরুতর অসম্মান হিসেবে উল্লেখ করেন। বাগাতিপাড়ার জনগণ মনে করেন, হাফিজুর রহমান একজন দীর্ঘদিনের জনসেবক, যিনি একটানা ছয়বার ২ নম্বর জামনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং পরে উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাগাতিপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। বাগাতিপাড়া উপজেলা বাসীর পক্ষে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়: “হাফিজুর রহমান হাফিজের প্রতি করা এই আচরণ চরম অসৌজন্যমূলক ও অমার্জনীয়। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।” উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. সাজেদুর রহমান সাজ্জাদ বলেন, “একজন সম্মানিত ও অভিজ্ঞ মানুষকে এভাবে অসম্মান করাটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি অনুষ্ঠানের মুহূর্তেই এর প্রতিবাদ জানিয়েছি।” বাগাতিপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হায়দার-রশীদ-সোনা বলেন, “এই ঘটনার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। অন্যথায় বৃহত্তর কর্মসূচির দিকে যেতে আমরা বাধ্য হবো।” ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. ওয়াজেদ আলী মৃধা বলেন, “আমাদের অফিসের এক কর্মচারীর ভুল বোঝাবুঝির কারণেই এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এ ঘটনায় অত্যন্ত লজ্জিত ও মর্মাহত। আমি ব্যক্তিগতভাবে হাফিজুর রহমান স্যারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।” একজন সাবেক জনপ্রতিনিধিকে এভাবে প্রকাশ্যে অপমানের ঘটনা নিঃসন্দেহে একটি দুঃখজনক নজির। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করলেও, জনমনে যে আঘাত লেগেছে তা দূর করতে সময় লাগবে বলেই মনে করছেন সচেতন মহল। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আরও সতর্কতা ও সংবেদনশীল আচরণ প্রত্যাশা করছেন এলাকাবাসী।

12Shares

শেয়ার করুন