লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে তানিয়া (২১) নামের এক গৃহবধূ একমাস ৯ দিন ধরে নিখোঁজ থাকার ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তার স্বজনরা।
এ ঘটনায় গৃহবধূর বড় বোন রিনা আক্তার বাদি হয়ে হত্যার পর লাশ গুম করার অভিযোগে গৃহবধূর স্বামী,শ্বশুর ও দেবর সহ ওই পরিবারের সাতজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে, মামলা দায়ের করার পর একমাস ৯ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ গৃহবধূর সন্ধান দিতে পারেননি। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন গৃহবধূর পরিবারের সদস্যরা। পাশাপাশি নানামুখী প্রশ্নবাণে চরম বেকায়দায় পড়েছেন গৃহবধূর শ্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন।
মামলার এজাহার ও গৃহবধূর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিনবছর আগে উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোহাম্মদ উল্লাহ বেপারীর ছেলে দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে একই উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের চর জাঙ্গালিয়া গ্রামের নুরুল ইসলামের মেয়ে তানিয়া বেগমের বিয়ে হয়।
বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবি সহ বিভিন্ন তুচ্ছ বিষয়ে শ্বামী দেলোয়ার হোসেন গৃহবধূর উপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন। নির্যাতনে সহযোগিতা করেন গৃহবধূর শ্বশুর মোহাম্মদ উল্লাহ, দেবর মো. হানিফ ও মোক্তার হোসেন এবং ননদ মর্জিনা বেগম সহ পরিবারের সদস্যরা। এতে দীর্ঘদিন ধরে গৃহবধূর স্বামীসহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে পারিবারিক কলহ চলে আসছিল। এছাড়া ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে বেধড়ক মারধর করা হয় ওই গৃহবধূকে।
এরই জের ধরে গত (৯ জুন) রাত আনুমানিক ১২টার দিকে নিখোঁজ হন গৃহবধূ ।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করেন, নিখোঁজ হওয়ার পর পরিবারের পক্ষ থেকে গৃহবধূর সন্ধান চেয়ে সম্ভাব্য সব জায়গায় যোগাযোগ করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
যে কারণে সন্দেহপোষণ করে গেল মাসের (১৩ জুন)
গৃহবধূকে হত্যার পর লাশ গুম করার অভিযোগ এনে স্বামী ও শ্বশুরসহ ওই পরিবারের সাতজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন ভিকটিমের বড় বোন রিনা আক্তার। যার নম্বর সিআর ৪৩৬/২৫
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে কমলনগর থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমানে কমলনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মো. কামরুল হাসান মামলাটি তদন্ত করছেন। তবে এখনো গৃহবধূর সন্ধান না মেলায় চরম উৎকন্ঠায় রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
গৃহবধুর শ্বশুর মোহাম্মদ আলী মুঠোফোনে জানান, গৃহবধূর ভাই ও বোন মিলে রাতের আঁধারে তাক ঘর থেকে বের করে কোথাও আত্মগোপনে রেখে তাদের বিরুদ্ধে সাজানো গুমের মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। তারপরও আত্মীয় স্বজনসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গৃহবধূর সন্ধানে কাজ করছেন তারা। তাকে হত্যা, গুম বা যৌতুক দাবির বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করে তিনি আরও জানান, প্রতিবেশী এক নারীর মদদে গৃহবধূ ঘর ছেড়েছেন বলে ধারণা তাদের, যে কারণে ওই নারীর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা করেছেন বলে জানান তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) কামরুল হাসান বলেন, মামলাটি আমলে নিয়ে অত্যান্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আসা করছি অল্পসময়ের মধ্যে একটা রেজাল্ট বের হবে।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম জানান, গৃহবধূ নিখোঁজের ঘটনায় তার স্বামী বাদি হয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করছেন। এছাড়া একই ঘটনায় কোর্ট আদেশে আরেকটি সিআর মামলার তদন্ত চলছে। তাকে উদ্ধারে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে ।