বুধবার, ৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, সন্ধ্যা ৭:৪৮

রূপগঞ্জে ডেমরা কালিগঞ্জ সড়কের হাবিব নগর – পূর্বাচল সংযোগ সেতুর নির্মান কাজ শেষ না হওয়ায় জনদূর্ভোগ চরমে

আরও পড়ুন

0Shares

মোঃ শরীফ ভুইয়া,সংবাদদাতা,রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের হাবিব নগর – পূর্বাচল সংযোগ সেতু দীর্ঘদিনেও শেষ হয়নি নির্মাণকাজ। দুই বছর আগেই সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি। সেতুর নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জনসাধারনের। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য নির্মাণাধীন সেতুর পাশে মাটির একটি রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। সে সড়কে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এই সেতুর জন্য ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রূপগঞ্জ,পূর্বাচল, হাবিব নগর, পিতলগঞ্জ,জাঙ্গীর,সুরিয়াব,হারিন্দা,মশুরি,মধুখালি, ঋষিপাড়া,শিমুলিয়া,বিংরাব এক কথায় ডেমরা – কালিগঞ্জ দিয়ে যাতায়াতে করা সকল লোক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শত শত গ্রামের মানুষ এ রাস্তা ব্যবহার করে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডেমরা কালীগঞ্জ সড়কে তিনটি সংযোগ সেতু। যা দীর্ঘদিন ধরে এই সেতুর কাজ গুলো মন্থর ভাবে চলছে । সেতুর দুই পাড়ে কোথাও সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড নেই। মাটির রাস্তা দিয়ে রিকশা, ইজিবাইক, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ট্রাক ও বাস চলাচল করছে। উঁচু-নিচু রাস্তা আর ধুলাবালুতে ভোগান্তির শেষ নেই। এখন বর্ষাকাল থাকায় প্রায়ই যান চলাচল বন্ধ থাকে । যানবাহন উল্টে গিয়ে অঙ্গ হানির মত ঘটনা ঘটছে। হাবিবনগর বাজারের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন,এই সেতু জন্য ডেমরা কালিগঞ্জ সড়কের পাশে যতগুলো বাজার আছে বন্ধ হওয়ার পথে। অনেকে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। পূর্বাচল মেডিলাইফ স্পেশাইসড হসপিটালের এমডি আমিরুল ইসলাম ইমন বলেন, আমরা কয়েক জন মিলে একটি হসপিটাল দিয়েছি চিকিৎসা সেবা মানুষের নিকটে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এই সংযোগ সেতুর নির্মান কাজ শেষ না হওয়ায় জনসাধারণের মাঝে চিকিৎসা সেবা সঠিক ভাবে দিতে পারছি না। ডাঃ ইদ্রিস আলী মিল্টন জানান, এই সড়ক ব্যবহার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়।এই রাস্তার নির্মাণ কাজ ধীর গতিতে হওয়ার কারে চরম ভোগান্তিতে আছ শত গ্রামের লোকজন। বিএনপি নেতা জিন্নত আলী বলেন, শত শত গ্রামের ছেলেমেয়েরা ঢাকায় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করে। এই অঞ্চলের সবাই এই সড়কটি ব্যবহার করে। কিন্তু ডেমরা -কালীগঞ্জ সড়কে তিনটি সংযোগ সেতু রয়েছে। যেগুলোর কাজ খুবই মন্থর। যার ফলে ঢাকার পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের খুবই কষ্ট করতে হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্র দলের সাবেক সহ সভাপতি আবু মোহাম্মদ মাছুম বলেন, আমি রূপগঞ্জ গ্রামের ছেলে। এই রাস্তা দিয়ে আমার প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়।একটু বৃষ্টি হলেই হাটুজল হয়।স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েরা এবং এই রাস্তা ব্যবহার করে রূপগঞ্জ থানায় যেতে হয় সেবা নিতে। এই রাস্তা অনেক খানাখন্দভরা বিধায় যারা সেবা নিতে আসে তারা পোহাতে হয়।পুলিশ প্রশাসন সেবা দিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অটো রিকশা চালক আবু সিদ্দিক বলেন, রাস্তা দিয়ে অনেক সময় গাড়ি উল্টে যায়। তবু আশপাশে বিকল্প সড়ক না থাকায় এখান দিয়েই যেতে হয়। আমাদের আয় অনেকটাই কমে গেছে । সরকারের কাছে আবেদন সেতুটির কাজ যেন দ্রুত শেষ হয়। কৃষক শুকুর আলি বলে, আমাদের উৎপাদিত শাকসবজি পূর্বাচলে সহজে নিয়ে যেতে পারি না । এই সেতুটির নির্মাণের কাজে অবহেলায় ভোগান্তির চরমে পৌছে গেছি। মিষ্টির দোকার আবুল হোসেন বলেন, একটু বৃষ্টি হলে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তখন এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারি না। আমাদের এই অবস্থা দেখার মত কেউ নেই। এই সেতুটি আমাদের জীবন জীবিকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থী রাসেল ভূইয়া বলে,বৃষ্টির সময় স্কুলে যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে আমরা পড়াশোনা অনেক পিছিয়ে পড়ছি। এলজিইডির রূপগঞ্জ উপজেলা কার্যালয়ের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে না পেয়ে মুঠোফোনের মাধ্যমে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এলজিইডির অর্থায়নে ৮৫ কোটি টাকায় সড়ক ও সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়।এই প্রকল্পটি চুক্তিবদ্ধ হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারস লিঃ (এনডিই)এর সাথে। ২০২৩ সালের ২২শে মে শুরু এবং ২০২৪ সালের মে মাসের ২৮ তারিখে শেষ হওয়ার কথা ছিল । ৫ই আগষ্টের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্টের অনেক লোক পালিয়ে যায়। এখন থেমে কাজ কাজ করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি।। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কারো সাথে সরাসরি এবং ফোন দিয়ে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মোঃ আক্তার হোসেন মুঠফোনে জানান এটি একটি প্যাকেজ প্রকল্প রাস্তা এবং সেতু এক সাথে। কাজ চলমান আছে। এখন বৈরি আবহাওয়ার কারনে কাজ বন্ধ আছে।তাছাড়া আরো কিছু দিন সময় বাড়াতে হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন,আমি এখানে যোগদানের পর থেকে এই রাস্তার বিষয়ে অনেক বার মিটিং করেছি যারা টেন্ডার পেয়েছে এনডিই এবং আমাদের ইন্জিনিয়ার সেকশনের সাথে। এটা মুলত জেলার কাজ। ৫ই আগষ্টের পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কর্মকর্তা পালিয়ে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরো বলে আরো ২ -৩ মাস সময় বেশি লাগবে।

0Shares

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরো