
আব্দুল মজিদ, নাটোর: “গৌরব ও ঐতিহ্যের ১০০ বছর — ১৯২৫ থেকে ২০২৫”। এই স্লোগানকে সামনে রেখে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার গড়মাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উদযাপন করলো তার শততম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী — এক অনন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা হয়ে থাকবে স্থানীয় শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সমাজের গর্বের প্রতীক। রবিবার সকাল সাড়ে দশটায় শুরু হয় দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত শতাধিক প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও অতিথিদের করতালির মধ্য দিয়ে উড়ে যায় রঙিন বেলুন ও সাদা পায়রা — শান্তি, আনন্দ আর স্বপ্নের বার্তা নিয়ে। সেই সঙ্গে উত্তোলিত হয় শতবর্ষের পতাকা, যা গর্বভরে জানান দেয়—এই বিদ্যালয়ের শত বছরের দীর্ঘ পথচলার কথা। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার পর শিক্ষার্থী, অভিভাবক, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বিশিষ্টজনদের অংশগ্রহণে শুরু হয় এক বর্ণাঢ্য র্যালি। সাদা পোশাকে সজ্জিত অংশগ্রহণকারীরা হাতে ব্যানার নিয়ে এগিয়ে যান গড়মাটির প্রধান সড়কে। ব্যানারে লেখা — “শতবর্ষ উদযাপন ২০২৫, গড়মাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়”। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব এবং গুরুদাসপুরের কৃতিসন্তান সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, “এই বিদ্যালয় ছিল অনেকের প্রথম শিকড় — এখান থেকেই শুরু হয়েছিল অনেকের স্বপ্ন দেখার যাত্রা।” বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন: বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচি ও বরাইগ্রামের কৃতিসন্তান মোতাকাব্বীর আহমেদ রাজু, মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শাহেদ আলী মিন্টু, নাটোর প্রেসক্লাবের সভাপতি ফারাজী রফিক বাবন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস। তাঁরা প্রত্যেকে বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য, শিক্ষকদের অবদান এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সাফল্যের প্রশংসা করেন। বিকেল পর্বে অনুষ্ঠিত হয় স্মৃতিচারণ ও গুণীজন সংবর্ধনা। প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের মুখে উঠে আসে তাঁদের শৈশবের গল্প, শিক্ষকদের স্নেহ, মাঠে খেলার দিনগুলো। পুরস্কৃত করা হয় সমাজে বিশেষ অবদান রাখা সাবেক ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। দিবসটির শেষাংশে ছিল এক মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করে দেশাত্মবোধক গান, আবৃত্তি, নৃত্য ও নাটিকা। এই অনুষ্ঠানে মঞ্চে প্রাণ পায় বিদ্যালয়ের শতবর্ষের ঐতিহ্য, স্বপ্ন ও ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি। এক শতাব্দীর দীর্ঘ যাত্রা পেরিয়ে গড়মাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আজ যেমন গর্বের ইতিহাস বহন করছে, তেমনি আগামী দিনেও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেবে—এই প্রত্যাশা সকলের মুখে। শতবর্ষ উদযাপন শুধু স্মরণীয় অনুষ্ঠানই নয়, ছিল একটি প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে স্বপ্ন বয়ে নেয়ার সেতুবন্ধ।