
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে সড়কে চলাচলকারী সিএনজি চালিত অটোরিকসা ও মোটরসাইকেলের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের নামে মামলার ভয় দেখিয়ে অবৈধ উপায়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে
ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) এস এম ইস্রাফিলের বিরুদ্ধে।
ইচ্ছে হলেই সড়কে চলাচলকারী যে কোনো যানবাহন আটকিয়ে চাহিদাকৃত টাকা পেলেই ছেড়ে দেন তিনি। তখন যেনো কাগজপত্রবিহীন অবৈধ গাড়িরও হয়ে যায় বৈধ।
অভিযোগ রয়েছে, রামগতি উপজেলায় সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিনিয়তই চেকপোস্ট বসিয়ে সিএনজি ও মোটরসাইকেল সহ বিভিন্ন যানবাহনের কাগজপত্র যাচাই করেন ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর (টিআই) ইসরাফিল। প্রতিদিন মোটরসাইকেল ও সিএনজি আটক করে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রাখেন। কখনো তিনি নিজে, আবার কখনো তার নিয়োজিত সোর্স দিয়ে গাড়িগুলো আটক করেন।
ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তার নিয়োজিত সোর্স দিয়ে অলিতে গলিতে ঘন্টার পর ঘন্টা যানবাহনগুলো ঘুরিয়ে বিশেষ মধ্যস্থতায় টাকা আদায় করে ছেড়ে দেন তিনি ।
অভিযোগ আছে কাগজপত্র সমস্যা দেখে গাড়িগুলো আটক করার পর বিশেষ মধ্যস্থতায় গাড়িগুলো ছেড়ে দেন। শুধু তাই নয় রেকার বিলের নামেও আদায় করেন মোটা অংকের টাকা।
এও অভিযোগ রয়েছে গাড়িগুলো জব্দ করে তার নিয়োজিত সোর্স দ্বারা আগে থেকে ঠিক করে রাখা দুরের কোথাও কোনো মোটরসাইকেল মিস্ত্রির দোকান, অথবা থানা কম্পাউন্ডের ভিতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর ঘুষের টাকার রফাদপার পর সোর্সের মাধ্যমে পুনরায় গাড়ি এনে মালিককে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
রেকার বিলের নামে মোটা অংকের টাকা জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেয়াই যেন এখন তাদের রুটিন কাজ! রশিদ না দিয়ে টাকা নেয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।
রামগতিতেই এমন অনিয়ম ঘটছে বলে জানায় সিএনজি, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন মোটরযানের চালক ও শ্রমিকরা।
সিএনজি চালক মো:রায়হান বলেন, আমার সিএনজি আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। অনেক অনুনয়-বিনয় করার পর আমার কাছ থেকে ১০০০ টাকা দাবি করেন তারা। টাকা দেয়ার পর গাড়িটি ছেড়ে দেন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর( টিআই) ইস্রাফিল।
সিএনজি চালক মো:ওমর ফারুক বলেন, আমাদের সাথে উনি সব সময় দুর্ব্যবহার করেন এবং মামলার ভয় দেখিয়ে সিএনজি অটোরিকসা আটকিয়ে আমাদের থেকে টাকা হাতিয়ে নেন।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক একাধিক সিএনজি চালক বলেন, উনি গাড়ীর কাগজপত্র দেখার নামে এভাবে যদি প্রতিনিয়ত আমাদের থেকে টাকা আদায় করেন, তাহলে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে চলবো? আমাদের ইনকাম কম, পরিবারের খরচ চালাতে কষ্ট হয়। এভাবে চলতে থাকলে আমরা সিএনজি চালানোর পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে যেতে হবে, এছাড়া আমাদের আর কোন উপায়ও নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রামগতি উপজেলার নিত্যদিনের রুটিন এটি! অনুসন্ধানে দেখা যায় পুলিশের সঙ্গে বসে থাকা স্থানীয় সাদ্দাম নামে এক ব্যক্তি, যিনি কাজ করেন সোর্স হিসেবে। এবিষয়ে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) ইস্রাফিল এর কাছে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন আমি আপনাদের চাকরি করিনা, আমি কি করব, সেটা আমার ব্যাপার।
তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা বলছেন, সিএনজি রেকার বিল করার সুযোগ নেই।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ট্রাফিক পুলিশের টিআই ইস্রাফিল বলেন, কাগজপত্রবিহীন গাড়ি আটকের পর অনেকেই মুঠোফোনে সুপারিশ করেন গাড়ি ছেড়ে দিতে। সুপারিশ না রাখায় উল্টো আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছে তারা। তবে এই প্রতিবেদনটি না করারও অনুরোধ জানান ট্রাফিক পুলিশের এই ইন্সপেক্টর।
এদিকে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর( প্রশাসন) প্রশান্ত কুমার দাস বলেন’ আমার কাছে কেউ এখনও অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।
সহকারি পুলিশ সুপার সার্কেল (রামগতি,কমলনগর) মোহাম্মদ রকিবুল হাসান পিপিএম বলেন, সড়কে অবৈধ যানবাহন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা ট্রাফিক বিভাগের কাজ। কিন্তু এক্ষেত্রে গাড়ি আটকিয়ে টাকা আদায় করা অনৈতিক। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।