
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে অস্ত্রের মুখে পরিবারের পাঁচ সদস্যকে জিম্মি পরবর্তী হাত-মুখ বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে ওই পরিবারের মোবারক হোসেন শুভ নামের এক কলেজ শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হবে এমনটা হুমকি দিয়ে ঘর থেকে তুলে নেন দুর্বৃত্তরা।
এসময় পরিবারের সদস্যদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে শিক্ষার্থীকে বাড়ির অদুরে রাস্তার পাশে ঝোপের মধ্যে ফেলে রেখে পালিয়ে যান দুর্বৃত্তরা ।
পরে হাত ও মুখ বাঁধা অবস্থায় শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোবারক হোসেন শুভ (২১) উপজেলার উপকূল সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী; ও একই উপজেলার চর লরেন্স ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার আলী হায়দার মেম্বার বাড়ির মো. সেলিমের ছেলে।
রোববার ২১ (এপ্রিল) দিবাগত রাত আনুমানিক তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শুভ’র মা সুফারা বেগম জানান, সোমবার রাত আনুমানিক তিনটার দিকে তিনি ও তার এক মেয়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিচ্ছিলেন। এ সুযোগে ঘরের দরজা খোলা পেয়ে অজ্ঞাত কয়েকজন অস্ত্রধারী যুবক ঘরে ঢুকে পড়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি তার অসুস্থ স্বামী, এক মেয়ে ও দুই ছেলের গলায় অস্ত্র (রামদা) ঠেকিয়ে ওড়না ও রশি দিয়ে মুখ ও হাত বেঁধে পেলে অজ্ঞাত পাঁচ যুবক। এসময় রামধার উলটো পিঠ দিয়ে সকলকে বেধড়ক মারধর করে অস্ত্রধারীরা। ঘরে স্বর্ণালংকার ও টাকা পয়শা থাকার পরেও কিছু না নিয়ে সকলকে মারধর করার একপর্যায়ে ছেলে
শুভর হাত ও মুখ বেধে তাকে ঘর থেকে তুলে নেয় ওই পাঁচ যুবক । ছেলেকে বাঁচাতে চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। পরে পিছনে হাত ও মুখ বাঁধা অবস্থায় বাড়ির দরজার থেকে শুভকে উদ্ধার করে লোকজন।
ভুক্তভোগী মোবারক হোসেন শুভ বলেন, গত মঙ্গলবার স্থানীয় জল্লাদের সমাজ এলাকায় ক্রিকেট টুনামেন্টে খেলতে যান তিনি । এসময় চরমার্টিন ৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা হানিফ মোল্লার ছেলে আমিনুল ইসলাম দুর্জয় তাকে কথা আছে বলে ডেকে নেয়। শুভকে সে জানায় একব্যক্তি তাকে মারধর করতে সেখানে তাকে পাঠিয়েছে। শুভ ওই ব্যাক্তির পরিচয় জানতে চাইলে এনিয়ে দূর্জয়ের সাথে তার বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে শুভর বন্ধুরা তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়।
ঘটনাটি শুভ গন্যমান্যদের জানানোর পর বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা উভয়ের কথা শুনে মিমাংসা করে দেন।
স্থানীয়রা বিষয়টি সমাধান করে দিলেও দুর্জয় শুভর উপর অখুশি হওয়ার কথা জানায়। বিষয়টি নিয়ে দুর্জয় কষ্ট পেয়েছে বলেও শুভকে ঠান্ডা মাথায় হুমকি দেয়।
শুভর অভিযোগ, ওই কষ্ট পাওয়ার ঠান্ডা মাথার হমকি পরবর্তী (আজ) সোমবার রাতে দূর্জয় তার সহযোগীদের নিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে। তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে তুলে নেওয়া হয়।
শুভ আরও জানান, পাঁচ যুবক আমার মুখ ও হাত বেঁধে রেখে চোখের সামনে বাবা,মা বোন ও ভাইকে মারতেছিল। একজন আমার গলায় ধারালো রামদা ধরে রেখেছিল। আমার বাবা চার বছর ধরে স্টোকজনিত রোগে ভুগছেন। কথাও বলতে পারেননা। তাছাড়া একটি হাত ভাঙা এবং প্লাস্টার করা। এ অবস্থায় আমার বাবাকে ওরা চরমভাবে মেরেছে। আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বার বার দোয়া কলেমা পড়ে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছিল। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আমাকে নিয়ে যাওয়ার সময় মা,ভাই,বোন চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে আমাকে রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে দৌড়ে চলে যায় অস্ত্রধারী ওই পাঁচ যুবক। মুখে কালো কাপর থাকায় কাউকেই চিনতে পারিনি বলে জানায় শুভ।
স্থানীয় ষাটোর্ধ বয়সী হালিম মিয়া বলেন, সোর-চিৎকার শুনে প্রতিবেশী মুসলিম বেপারী ঘর থেকে বেড় হয়ে টর্চ লাইটের আলো মারলে অপহরণকারীরা শুভকে ফেলে রেখে দৌড়ে চলে যায়।
মুসলিম বেপারী বলেন, শুভকে নিয়ে যায় এমন সোর-চিৎকার শুনে আমি টর্চ লাইট নিয়ে বের হই। এসময় আসপাশের অনেক লোকজনও জড়ো হয়। পরে এগিয়ে গিয়ে দেখি পিছনে হাত ও মুখে বাঁধা অবস্থায় শুভ রাস্তার পাশে পড়ে আছে। পরে তাকে উদ্ধার করা হয়।
অভিযুক্ত আমিনুল ইসলাম দূর্জয় বলেন, সেদিনের বিষয়টি ছিলো শুভর সাথে দুষ্টুমি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের মাঝে সমাধানও হয়েছে। তাকে তুলে নেয়া বা তার পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে মারধর করার সাথে আমি জড়িত নই। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। গতকাল রাতে আমি বাড়িতেই ছিলাম।
এ বিষয়ে কমলনগর থানার ওসি মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এবিষয়ে এখনো কেউ কিছু জানায়নি। তবে ভুক্তভোগীর পরিবার থেকে অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক বেবস্থা নেওয়া হবে।