
বরগুনার আমতলীতে তরমুজ পরিবহনের গাড়ি থেকে চাঁদা দাবির প্রতিবাদ করায় বিএনপি সমর্থিত একটি পরিবারের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার বিরুদ্ধে। বুধবার সন্ধ্যায় চালানো ওই হামলায় এক নারী সহ অন্তত পাঁচ জন আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থার অবনতি দেখে দুজনকে রবিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন চিকিৎসক। অন্যদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের পূর্ব সোনাখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনো সময়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছেন স্থানীয়রা।
ভুক্তভোগীরা জানান,স্থানীয় আওয়ামী সমর্থিত ইসরাফিল মোল্লা একই এলাকার তরমুজ ব্যবসায়ী ছিদ্দিক খানের পরিবহনকৃত তরমুজের গাড়ি থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিল। বুধবার বিকেলে চাঁদা দাবির বিষয়টি নিয়ে ইসরাফিল মোল্লার সাথে ছিদ্দিক খানের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। পরে লোকজন এসে বিষয়টির সমাধান করে দেন। এরই জের ধরে ওই দিন সন্ধ্যার পর ইসরাফিল মোল্লা আওয়ামী লীগের শতাধিক লোকজন নিয়ে দেশীয় অস্র-সস্র সহ ছিদ্দিক খানের পরিবারের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে ছিদ্দিক খান, তার ভাই নিজাম খান, চাচাতো ভাই খোরশেদ খান, ভাতিজা মো. রাকিব খান, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী হাসিনা বেগমকে পিটিয়ে ও মেরে রক্তাক্ত জখম করা হয় । এসময় আহত খোরশেদ খানের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ভাংচুর- লুটপাট করাসহ নিজাম খানের সাথে থাকা নগদ পনের লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় হামলাকারীরা।
নাম পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধে স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তি জানান, দূর্ণীতির দায়ে চাকুরীচ্যুত ‘দূর্ণীতি দমন কমিশন দুদকের উপপরিচালক ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রভাবশালী আমলা মাহবুব আলম মোল্লার প্রত্যক্ষ মদদে তার ভাই স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য নাসির উদ্দীন মোল্লার শেল্টারে বিএনপি করার অপরাধে ছিদ্দিক খানের পরিবারের উপর কয়েক দফা হামলা চালায়।
তারা বলেন, শেখ হাসিনা পলায়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পতন হলেও মাহবুব মোল্লা পরিবার এলাকায় এখনো আওয়ামী লীগের দাপট খাটিয়ে যা ইচ্ছে তাই করছেন। বিনা দোষে ছিদ্দিক খানের পরিবারের উপর দূধর্ষ হামলা চালিয়ে এলাকায় ভিতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছেন। তাদের প্রশ্ন আওয়ামী লীগের দোষর হয়ে মাহবুব মোল্লা পরিবার এখনো কিভাবে প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে।
এ বিষয় ভুক্তভোগী আখতারুজ্জামান সবুজ খান জানান,ইসরাফিল মোল্লা তরমুজের গাড়ী থেকে চাঁদা দাবীর ঘটনায় আমরা প্রতিবাদ করায় দূর্নীতি দমন কমিশেেনর উপ পরিচালক মাহবুব মোল্লার প্রত্যক্ষ মদদে তার ভাই ইউপি সদস্য ও ওর্য়াড আওয়ামীলীগ সভাপতি নাসির মোল্লা তার ভাতিজা ইসরাফিল মোল্লার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের শতাধিক নেতাকর্মীরা আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। আমাদের পরিবারের পাঁচজন সদস্যকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক আহত করেন। বর্তমানে দুইজন বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন আছে। তাদের অবস্থা আশংকাজনক। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা ইসরাফিল মোল্লা তার বিরুদ্ধে চাদা দাবীর অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, আখতারুজ্জামান সবজু খান লোকজন নিয়ে আমার ও আমার বাড়ীর লোকজনের উপর হামলা ও মারধর করেছে। এরবেশি কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
এ ব্যাপারে আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, এবিষয় এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য: অভিযোগ রয়েছে, দূর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক) উপপরিচালক ও দূর্ণীতির দায়ে চাকুরীচ্যুত মাহবুব আলম মোল্লার প্রত্যক্ষ মদদে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিজেকে পর্দার আড়ালে রেখে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কতিপয় ব্যাক্তি ও ভারাটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে এ হামলা করান তিনি। চাউর আছে, এ মাহবুব আলম মোল্লা চাকুরীকালীন সময়ে বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের দায়েরকৃত অন্তত ডজনখানেক মিথ্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন।
যেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মনগড়া বানোয়াট ও ভিত্তিহীন চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তিনি। এছাড়া এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের দমন-পীড়নে অর্থের যোগান দিতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এম/শা/কা