শুক্রবার, ৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, রাত ১১:১৭

কমলনগরের হাফেজিয়া প্রবেশমুখে সাতজনের প্রাণহানি!

3Shares

[দুই বছরে ১০ সড়ক দুর্ঘটনায় সাতজনের প্রাণহানি, আহত অসংখ্য
দুর্ঘটনাপ্রবণ ‘হাফেজিয়ায়’ স্পিডব্রেকার নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর]
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে একের পর এক দুর্ঘটনায় মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে লক্ষ্মীপুর-রামগতি আঞ্চলিক সড়কের কমলনগর উপজেলার চরজাঙ্গালীয়া হাফেজিয়া নামক স্থানটি। গত দুই বছরে এখানে সংঘটিত হয়েছে অন্তত ১০টি সড়ক দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় সাতজন প্রাণ হারানোর পাশাপাশি আহত হয়েছেন অসংখ্য নারী-পুরুষ। আহতদের অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এমতাবস্থায় জনসাধারণের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ওই স্থানটিতে স্পিডব্রেকার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর-রামগতি আঞ্চলিক সড়কের কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের নাজিরিয়া গ্রামীণ সড়কের সংযোগস্থানটি হাফেজিয়া এলাকা হিসেবে পরিচিত। এ সড়কটি দিয়ে উপজেলার কাদির পন্ডিতেরহাট, জাজিরা, নোয়াহাট, দেওয়ান মার্কেট ও পাতাবুনিয়া এলাকার লোকজন চলাচল করেন। যাতায়াত সুবিধা ও লক্ষ্মীপুর-রামগতি আঞ্চলিক সড়কের বিকল্প হিসেবে মতিরহাট, মুন্সিরহাট, চৌধুরী বাজার, নবীগঞ্জ ও ভক্তপাড়া এলাকার লোকজন জরুরি প্রয়াজনে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে এ সড়কটি ব্যবহার করেন। এছাড়া ওই সংযাগস্থানটির পাশেই গড়ে ওঠেছে হাফেজিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসা এবং কমলনগর মহিলা মাদ্রাসাসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেখানে কয়কশ’ ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করছে। এসব কারণে এস্থানটি ব্যস্ততম সড়কে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এখানে কোনা স্পিডব্রেকার না থাকায় ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা।

গেল বুধবার (১ জানুয়ারি) ওইস্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রদলের এক কর্মীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। গেল বছরের এপ্রিলে ওই স্থানে মোটরসাইকেল আরাহী এক স্কুলশিক্ষক দ্রুতগতির বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন।

এর আগে ওই এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় যাত্রীবাহী অটারিক্সার দুই যাত্রী এবং এক পথিক অপর দুর্ঘটনায় এক প্রবাসী ও এক নারী নিহত হন। এ নিয়ে গত দুই বছরে ওইস্থানে ঘটে যাওয়া অত্যান্ত ১০টি দুর্ঘটনায় সাতজন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ।

স্থানীয় বাসিদা ও কমলনগর মহিলা মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা মো. আবদুল বয়ান ও উপজেলা গ্রাম পুলিশ সমিতির সভাপতি মো. ইসমাইলসহ কয়েকজন জানান, নাজিরিয়া সড়ক ও লক্ষ্মীপুর-রামগতি আঞ্চলিক সড়কের প্রবেশমুখ একটি ত্রিমুখী সংযোগস্থল। এখানে স্পিডব্রেকার না থাকায় কয়েকদিন পরপরই দুর্ঘটনা ঘট। এস্থানটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। যে কারণে, কর্তৃপক্ষের কাছে ওইস্থানে একটি স্পিডব্রেকার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

ওই সড়কে যাতায়াতকারী সিএনজিচালিত অটারিক্সার কয়কেজন চালক জানান, লক্ষ্মীপুর-রামগতি আঞ্চলিক সড়কের লরেন্স থেকে হাজিরহাটের মিয়াপাড়া মোড় পর্যন্ত চার কিলামিটার সড়ক সোজা হওয়ায় চালকরা অতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চালান। আবার, নাজিরিয়া সড়ক হয়ে যানবাহনগুলোর চালকরা ডান-বাম না তাকিয়ে সরাসরি প্রবশমুখ হয়ে লক্ষ্মীপুর-রামগতি আঞ্চলিক সড়কে ঢুকে পড়েন। এতে মূল সড়কের দু’দিক থেকে আসা দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়ে দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কমলনগর উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল আনোয়ার জানান, সড়কটির ওইস্থানে গতি কমিয়ে গাড়ি চালাতে সাইনবোর্ডে নির্দেশনা দেয়া আছ। তাছাড়া, মূল সড়কে স্পিডব্রেকার দিতে হলে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা লাগে। তাই এলাকাবাসীর দাবির বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুচিত্র রঞ্জন দাস জানান, ওই স্থানটি দুর্ঘটনাপ্রবণ হওয়ার বিষয়টি তিনি অবগত। স্পিডব্রেকার নির্মাণে এলাকাবাসীর দাবির বিষয়টি  ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। অনুমতি পেলে ওই স্থানে স্পিডব্রেকার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

3Shares

শেয়ার করুন