
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে সকাল থেকে সন্ধ্যা আবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিরামহীন মাইকের উচ্চ শব্দে সুখবর, সুখবর’ শুনতে শুনতে বাসাবাড়িতে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
কখনো বেসরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা ও নানা সুযোগ-সুবিধার সুখবর, কখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, কোচিং, দোকান, হোটেল, বিরানি, শোরুম উদ্বোধন, কখনো আবার বিভিন্ন পণ্যের অফার, কম মূল্যে লাইট বিক্রি, পোলট্রি মুরগির মুল্য অফার ও শাকসবজির বীজের প্রচার, বিশাল গরু-মহিষ জবাই, মোটরসাইকেলের অফার প্রচারণা।
অভিযোগ রয়েছে, সকাল-সন্ধ্যা ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সুখবর প্রচারের নামে কতিপয় লোকজন এ শব্দ সন্ত্রাসীপনা করে আসলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। এতে বিপাকে পড়েছেন এ এলাকার রোগী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।
লোকজন বলছেন, মাইকের বিরামহীন এ প্রচারণা তাদের কাছে এখন বিষপোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। সচেতন নাগরিক ও শিক্ষার্থীরা এর প্রতিকার চেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
অবস্য চিকিৎসকরা বলছেন, মানুষের শ্রবণের জন্য শব্দের ৪৫ ডেসিবেল হচ্ছে সহনীয় মাত্রা। তবে তা ৭০ ডেসিবেল অতিক্রম করলে ক্ষতিকর। কমলনগরে প্রতিনিয়ত যে হারে মাইকিং করা হয়, তাতে শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবেলের কাছাকাছি থাকে। যা মানুষের শ্রবণ শক্তির জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে শিশুদের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় ১৯ টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আসেন। রোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এসব চিকিৎসকের আসার কথা জানিয়ে মাইকিং করেন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। এতে বিরক্ত হয়ে অনেকে কানে আঙুল দিয়ে পথ চলেন। প্রযুক্তির যুগে এখন আর ঘোষকের দরকার না পড়ায় ঘোষণাটি একবার রেকর্ড করে নিলেই ব্যাস। রিকশায় মাইক বেঁধে দিনভর চলতে থাকে রেকর্ড করা সেই ‘সু-খবর ঘোষণা। সঙ্গে উচ্চ আওয়াজের মিউজিক। ফলে মারাত্মকভাবে হচ্ছে শব্দ দূষণ। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন,মওসুমের এই সময়টায় ধর্মীয় সভার প্রচারণাও বেশি। মোদ্দাকথা মাইকিংয়ের ক্ষেত্রে হাসপাতাল, ক্লিনিক, সরকারি অফিস, স্কুল-কলেজের পরিবেশের কিছুই মানা হচ্ছে না। এছাড়া এলাকাগুলোতে একটা মাইকের প্রচারণা চালানোর সঙ্গে সঙ্গে মুখোমুখি আরেকটি এসে শব্দের প্রতিযোগিতা করে প্রচার চালাচ্ছে। এতে উপজেলাবাসীর জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে দিনের পর দিন মাসের পর মাস একই নিয়মে উচ্চ শব্দে মাইকে প্রচার চালিয়ে আসলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
এবিষয়ে কমলনগর স্বাস্থ কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা: সোহেল রানা বলেন, উচ্চ শব্দে মাইকিং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সহনীয় মাত্রার বেশি হলে ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যঝুঁকি সহ শ্রবণসমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে মানুষ। এছাড়া উচ্চ শব্দ এরিয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
তোরাবগঞ্জ বাজারের রাজধানী হোটেল মালিক আবু ছিদ্দিক যুগান্তরকে বলেন, মাইকের শব্দে দোকানে বসে থাকাটাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। মাইকের শব্দে মুঠোফোনে ঠিকমতো কথাও বলা যায় না।
উপকুল কলেজের শিক্ষার্থী সাবিকুন্নাহার বলেন, নির্দিষ্ট কোনো সময় না মেনে প্রতিদিন সুখবরের নামে উচ্চ শব্দে মাইকিং করা হয়। এতে আমাদের পাঠদানে সমস্যা হয়। এসব নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসা প্রয়োজন বলে দাবি তার।
স্থানীয় সংবাদকর্মী ও শিক্ষক নাসির মাহমুদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কমলনগরে ব্যাপক হারে মাইকিং বেড়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইউএনওর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুচিত্র রাঞ্জন দাস
বলেন, উচ্চ শব্দে মাইকের প্রচারের বিষয়টি তার নজরে এসেছে। মাইকের উচ্চ শব্দের কারণে তুলনামূলকভাবে শিক্ষার্থীদের স্কুল–কলেজ ও অফিস–আদালতের কাজেরও সমস্যা হয়। শীঘ্রই এসবের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এম/ এস/এস/আরএস